শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১৯ আশ্বিন, ১৪৩১
Live TV
সর্বশেষ

যেসব ধাপে শয়তান মানুষকে ধোকা দেয়

দৈনিক দ্বীনের আলোঃ
২২ মার্চ, ২০২৪, ১:৪৮ অপরাহ্ণ | 156
যেসব ধাপে শয়তান মানুষকে ধোকা দেয়
২২ মার্চ, ২০২৪, ১:৪৮ অপরাহ্ণ | 156

শয়তান শব্দটি শাতান শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ অপবিত্র ও নিকৃষ্ট। শয়তান এমন একটা অস্তিত্ব যেটা আল্লাহদ্রোহী। শয়তান হয়ে থাকে জিন ও মানবজাতি থেকে (সূরা নাস)। জিন শয়তান অন্তরে ওয়াসওয়াসা দেয় যা দেখা বা শুনা যায় না, আর মানব শয়তানের ওয়াসওয়াসা দেখা ও শুনা যায় কিন্তু ওয়াসওয়াসা হিসেবে অনুধাবন করা হয় না। তাদের উভয়ের উদ্দেশ্যই মানুষকে পথভ্রষ্ট করা। শয়তান শুধু কুমন্ত্রণাই দিতে পারবে, কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
আল্লাহ যখন আদমকে (আ) শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষনা করে, তখন শয়তান অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে বলে, আদম মাটির তৈরী আর আমি আগুন দিয়ে (সূরা সোয়াদ)। ইবলিশ শয়তান হওয়ার পূর্বে অহংকারী হয়ে নিজের প্রবৃত্তির (নফস) অনুসরণ করে শয়তানে পরিণত হয়। শয়তানের অস্তিত্ব যদি নাও থাকতো, আমাদের এটার (নফস) মোকাবিলা করতে হত। শয়তান তার অঙ্গীকার অনুযায়ী বিভিন্ন কৌশলে আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে যেভাবে সে তাদের পিতা আদমকে (আ) ধোঁকা দিয়ে জান্নাত থেকে বের করে। তার বিভিন্ন চেষ্টা হলঃ
১. সর্বপ্রথম সে চেষ্টা করবে মানুষকে শির্কে লিপ্ত করাতে। কারন আল্লাহ শির্ক ব্যাতীত সকল গুণাহ ক্ষমা করেন যাকে ইচ্ছা (সূরা নিসাঃ ৪৮)। শয়তান চায়ই মানুষ শিরক করা অবস্থায় মারা যাক, যাতে সে চিরকাল জাহান্নামে তার সঙ্গী হয়। ব্যার্থ হলে সে পরের চেষ্টাটি চালায়।
২. ব্যার্থ হলে সে চাইবে ঐ ব্যাক্তির দ্বারা বিদআত করাতে, এর উদ্ভাবন ও প্রচলন করাতে। যখন কেউ বিদআত করে সে ভাবে সঠিক কাজ করছে, তাই তওবাও করে না। রাসূল (স) বলেন প্রতিটি বিদআতই গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায় (আবু দাউদঃ ৪৬০৭)। আর শয়তান চায় মানুষকে পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ করতে (সূরা নিসাঃ ১১৯)।
৩. কবিরা গুণাহের মাধ্যমে শয়তান মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরাতে চেষ্টা করে। আল্লাহ বলেন, “কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরণ করলে সে তাকে নির্লজ্জতা ও অপকর্মের আদেশ দেয়” (সূরা নুরঃ ২১)। আল্লাহ আরো বলেন, “কখনো নয়; বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে।”(সুরা মুতাফফিফিনঃ ১৪)। রসূল (স) বলেন, মুমিন ব্যাক্তি গুণাহ করলে অন্তরে কালোদাগ পড়ে, পাপের পরিমাণ বেশি হলে কালোদাগ অন্তরকে ঢেকে পেলে (তিরমিজিঃ ৩৩৩৪)।
৪. কবিরা গুণাহ করাতে ব্যার্থ হলে শয়তান সগীরা গুণাহ করাবার চক্রান্ত চালায়। সগীরা গুণাহ ধীরে ধীরে কবীরা গুণাহের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়।
৫. উপরোক্ত চেষ্টায় ব্যার্থ হওয়ার পর শয়তান এমন কাজকে গুরুত্বপূর্ণ করে দেখায় যাতে নেই কোন নেক বা গুণাহ নেই। গুনাহ না থাকার কারনে মুমিন ঐ কাজ করতে দ্বিধা বোধ করবে না। ফলে শয়তান তাকে গুরুত্বহীন কাজে ব্যস্ত রেখে নেক কাজ থেকে বিরত রাখে।
৬. শয়তান মানুষকে অধিক ফযীলতের আমল থেকে বিরত রেখে, অপেক্ষাকৃত কম ফযীলতের একটা নির্দিষ্ট ভাল আমলে লিপ্ত রাখে। আর সে ব্যক্তিও উত্তম ও সুন্দরতম আমল থেকে বিরত থেকে এতেই নিবিষ্ট থাকে। যেমনঃ কোন ফরজ কাজের সময় সুন্নাত কাজে ব্যাস্ত রাখা।
৭. সকল পর্যায়ে যখন সে ব্যার্থ হয় তখন সে সমস্ত শয়তান ও তার মানব অনুসারীদের মুমিন ব্যাক্তির ওপর লেলিয়ে দেয়। তাদের দ্বারা তাকে অত্যাচার করে, কষ্ট দিয়ে তার ক্ষতি করার সর্বাধিক চেষ্টা করে এবং ধৈর্য্যহারা করার প্রয়াস চালায়।
বনী ইসরাইলের ধার্মিক ব্যাক্তি বারসীসাকে শয়তান এইভাবেই ধোঁকায় পেলে। যেহেতু সে দ্বীনদার ছিল, সেহেতু সে ধীরে ধীরে বিভিন্ন নেক সুরত ও গুণাহের মাধ্যমে বারসীসাকে শিরকে লিপ্ত করায়। তিন যুবককে জিহাদের জন্য ডাকা হলে তারা তাদের বোনের নিরাপত্তার জন্য বারসীসার কাছে রেখে যায়। বারসীসা প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও পরে মেয়েটির খারাপ কারো কাছে সৌপর্দ্য হওয়ার কথা চিন্তা করে মেয়েটিকে রেখে দেয়। শয়তান তাকে যেভাবে ধোঁকায় পেলেঃ
ক. নেক উদ্দেশ্যে যুবকদের বোনকে গ্রহণ করা। (কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ)
খ. মেয়েটির ঘরের সামনে খাবার রেখে আসা (প্রথমে দূরে গীর্জার মধ্যে রাখত)। (অধিক কম গুরুত্বপূর্ণ)
গ. মেয়েটির যাতে ঘর থেকে বের হতে না হয়, তাই খাবার ঘরে রেখে আসা। (অপ্রয়োজনীয় কাজ)
ঘ. মেয়েটির একাকিত্ব কাটানোর জন্য পর্দার আড়ালে থেকে কথা বলা। (গুণাহ)
ঙ. কথা বলায় ভালো লাগার সৃষ্টি ও অবশেষে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় এবং মেয়েটি সন্তান জন্ম দেয়। (কবিরা গুণাহ)
চ. নিজের কুকর্ম ঢাকতে মেয়ে ও শিশুটিকে হত্যা। (কবিরা গুণাহ)
ছ. শয়তানের চক্রান্তে তার গুণাহ প্রকাশ হয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তি ও মুক্তির আশায় শয়তানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে তাকে সিজদা দিয়ে মৃত্যুবরন করা। (শিরক করা)