শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১
Live TV
সর্বশেষ

মনোনয়ন বঞ্চিত ড.জয়া সেনগুপ্তাকে ভোট দিয়ে প্রয়াত সুরঞ্জিতের প্রতি ভালোবাসা দেখালেন দিরাই-শাল্লা ভোটারা

দৈনিক দ্বীনের আলোঃ
৯ জানুয়ারি, ২০২৪, ৯:৫৮ অপরাহ্ণ | 51
মনোনয়ন বঞ্চিত ড.জয়া সেনগুপ্তাকে ভোট দিয়ে প্রয়াত সুরঞ্জিতের প্রতি ভালোবাসা দেখালেন দিরাই-শাল্লা ভোটারা
৯ জানুয়ারি, ২০২৪, ৯:৫৮ অপরাহ্ণ | 51

 

শংকর ঋষি শাল্লা সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জ—২ (দিরাই—শাল্লা) আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত ড. জয়া সেন গুপ্তাকে ভোট দিয়ে প্রয়াত সুরঞ্জিতের প্রতি ভালোবাসা দেখালেন দিরাই—শাল্লার ভোটাররা। নির্বাচনী এলাকার দুইটি উপজেলায়ই আ ওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ (আল—আমিন চৌধুরী) চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন জয়া সেন। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রার্থীর উপরই সন্তুষ্টি কম ছিল ভোটারদের। কিন্তু প্রয়াত সুরঞ্জিতের প্রতি ভালোবাসা থেকেই, তাঁর প্রতিনিধি চিন্তা করে জয়া সেনকে বেঁচে নিয়েছেন তাঁরা।

সাতবার নির্বাচন করায় প্রয়াত পার্লামেন্টারিয়ান—রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ—২ (দিরাই—শাল্লা) ভোটের রাজনীতিতে ‘সুরঞ্জিতের আসন’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা গেলে, তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা ওই বছরের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়া সেন দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দলের মনোনয়ন চেয়েও পান নি তিনি। মনোনয়ন পান আইজিপির ভাই শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ (আল—আমিন চৌধুরী)।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ে শাল্লা উপজেলায় নৌকার চেয়ে কাঁচি মার্কায় চার হাজার ১৩ এবং দিরাই উপজেলায় পাঁচ হাজার ৯০ ভোট বেশি পান জয়া সেন। নির্বাচনী এলাকার তিন কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। ওই তিন কেন্দ্রের ভোট ছিল নয় হাজার ৫৭। জয়া সেন ওই তিন কেন্দ্র ছাড়াই ভোট পান ৬৭ হাজার ৭৭৫ এবং আল আমিন চৌধুরী পান ৫৮ হাজার ৬৭২ ভোট। ওই তিন কেন্দ্রের সকল ভোট আল আমিন চৌধুরী পেলেও জয়া সেন’র ভোট বেশি হয় বিবেচনায় বেসরকারিভাবে তিনি বিজয়ী হন।

নির্বাচনী এলাকার শাল্লা উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বললেন, প্রয়াত সুরঞ্জিতের স্ত্রী জয়া সেন মনোনয়ন চেয়েও না পাওয়ায় ভোটাররা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দাতাদের উপর কিছুটা বিরক্ত ছিলেন। এছাড়া জয়া সেন’র বিরুদ্ধে সমালোচনা ছিল, তিনি এলাকায় সময় দেন নি, দিরাইয়ের আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ রায় তাঁর প্রতিনিধিত্ব ভালোভাবে করতে পারেন নি। ঠিক একইভাবে শাল্লায়ও সমালোচনা ছিল, আল আমিন চৌধুরী শাল্লায় জয়ার প্রতিনিধিত্ব ঠিকভাবে করেন নি। অর্থাৎ জয়া ও আল আমিন দুজনের প্রতিই অসন্তুষ্টি ছিল ভোটারের। প্রার্থী দুইজনের পক্ষেই আওয়ামী লীগের নেতারা সক্রিয় ছিলেন। দুইজনকেই ভোটাররা আওয়ামী লীগেরই প্রার্থী বিবেচনা করেছেন। এই অবস্থায় ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল, প্রয়াত রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনকে প্রচারণায় সামনে আনতে সক্ষম হয়েছিল জয়া’র সমর্থকরা। এই প্রচারণা মানুষ গ্রহণ করেছে। এছাড়া বিএনপি’র ভোটাররা যারা কেন্দ্রে গিয়েছে, তারা আল আমিনের নৌকায় ভোট না দিয়ে জয়ার কাঁচি মার্কায় ভোট দিয়েছে বলে এলাকায় প্রচার আছে।

দিরাইয়ের রাজানগরের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষক নেতা ছত্তার মিয়া বললেন, প্রায় ৫০ বছর দিরাই—শাল্লার মানুষের সঙ্গে নিবিরভাবে জড়িত ছিলেন প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। তাঁকে কুঁড়ে ঘর প্রতীকেও ভোট দিয়েছে এখানকার মানুষ। প্রয়াত সুরঞ্জিতের রাজনৈতিক প্রতিভাকে মানুষ মূল্যায়ন করেছে তাঁর স্ত্রীকে ভোট দিয়ে। নির্বাচনে দুইপক্ষই ‘সম্প্রদায় ইস্যু’ প্রত্যক্ষ—পরোক্ষভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দিরাই—শাল্লার অসাম্প্রদায়িক মানুষ এসব প্রচারণাকে খুব একটা আমলে নেন নি।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ অমর চাঁন দাস বললেন, নির্বাচনের দুই দিন আগে শাল্লার ভেড়াডহরে রবীন্দ্র বৈষ্ণবের ফসলি জমিতে প্রভাবশালী অন্যপক্ষ মই দেওয়ার বিষয়টিকে একটি সম্প্রদায়ের লোকজন ভালোভাবে দেখেন নি। জয়া সেন’র পক্ষ এই ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়েছে। সম্প্রদায় ইস্যুকে কাজে লাগিয়েও কিছু ভোট এদিক—সেদিক হয়েছে।

শাল্লার একজন সরকারি চাকুরিজীবী বললেন, জয়া সেন মনোনয়ন না পেয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর, তিনি (শেখ হাসিনা) যে জয়া সেন’এর সঙ্গে ছবি তুলেছেন, এই ছবি জয়া সেনকে দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি এটি এলাকাবাসী দেখাবেন’। প্রধানমন্ত্রী জয়া সেনকে ভোটে দাঁড়ানোরও অনুমতি দিয়েছেন। এই কারণে দলীয় প্রতীক না পেলেও তার কর্মীদের মনোবল ভাঙেনি।

জয়া সেন সোমবার দুপুরে এই প্রতিবেদককে বললেন, ভোটে জেতায় আমার কোন ক্যারিশমা নেই। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমাকে ভোট দিয়েছেন দিরাই—শাল্লার ভোটাররা। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জন্য এখনো এখানকার মানুষ কাঁদেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ভাই (আসাদুজ্জামান খাঁন কামার) ভাই যেমন আমাকে দেখলেই বলেন, ‘আপনাকে দেখলেই বৌদি সুরঞ্জিত দা’র কথা মনে পড়ে। মনে হয় ওই বোধ হয় দাদা আসছে।’ ঠিক একইভাবে এখানকার মানুষও উনার (সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত) কথা মনে করেই আমাকে ভোট দিয়েছে।

error: Content is protected !!