বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩১
Live TV
সর্বশেষ

মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা

শতদল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

দৈনিক দ্বীনের আলোঃ মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ | 63
শতদল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ | 63

সাতক্ষীরা তালা উপজেলার ৫নং তেতুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত শতদল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পারফর্মেন্স বেজড প্লান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই)এর প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র সরকার ও অত্র প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে। পিবিজিএসআই-এর প্রণোদনার অর্থ শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী, বইপত্র, শিক্ষা উপকরণ, লাইব্রেরি এবং গবেষণাগার সরঞ্জাম, বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল/ফিল্টার সংযোজনসহ ইত্যাদি খাতে ব্যয় করার কথা। মূলত সুবিধা বঞ্চিত, ভূমিহীন, গৃহহীন, অতিদরিদ্র, এতিম, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঁচ হাজার টাকা সরকারি ভাবে প্রণোদনা সহায়তা প্রদানের কথা।

কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তার নিজের ক্ষমতা বলে এই প্রণোদনার অর্থ নয়-ছয় করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বন্টনকৃত প্রণোদনা প্রদানের অর্থের ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রণোদনার ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার কথা তারা অনেকেই তা পাননি। মুড়াকুলিয়া গ্রামের শাহাদাত হোসেনের মেয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী শারমিন আক্তার তন্নী পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা, ফারুক হোসেনের ছেলে মুসাব্বির সরদার ৫ হাজার টাকা, তেতুলিয়া গ্রামের ইনছার আলীর ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মাহফুজ আলী পেয়েছেন ৫ হাজার টাকা, সিরাজ সরদারের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আব্দুল আলীম ৫ হাজার টাকা, তাইজেল মোল্লার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে তাসরিন খাতুন পেয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, এরকম আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী তাদের ন্যায্য প্রণোদনার টাকা পায়নি।

কলিয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যক্তি বলেন প্রধান শিক্ষক লাইব্রেরিতে কিছু পুরাতন আলমারি রং করে নতুন বলে ভাউচার দেখিয়েছেন এবং বইপত্র তেমন একটা ক্রয় করেননি। বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল/ ফিল্টার সংযোজন করেননি। এব্যাপারে শতদল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র সরকারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত প্রণোদনার অর্থ সঠিক ভাবে ছাত্র-ছাত্রী ও ১১ জন শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে চারটি আলমারি, কিছু বই ও ছাত্রীদের কমনরুমের পাশে একটা টয়লেট নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ৫ হাজার দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে সবাইকে একটু কম কম করে দিয়ে ২৫ জনের জায়গায় ৪১ জনকে দিয়েছি। টাকা খরচ হবার পর আমরা জানতে পারলাম যে এই ৫ লক্ষ টাকার ভ্যাট দিতে হবে সেখানে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত ১ লক্ষ টাকার ১০% হারে দশ হাজার আর বাকি অর্থের ভ্যাট বাবদ মোট আমরা ৩২ হাজার টাকা ভ্যাট দিয়েছি। টাকা আত্মসাৎ করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির একজন ব্যক্তি সভাপতি হতে না পারায় তিনি বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের অপ্রচার চালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাদের স্কুলে সঠিকভাবেই সব কিছু করা হয়েছে কোন রকম কোন অনিয়ম হয়নি।

শতদল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন বরাদ্দকৃত টাকা থেকেও আমাদের ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে, লাইব্রেরির জন্য কম বই কিনে সেখান থেকে ২০ হাজার টাকা বাচানো হয়েছে ওয়াশরুম মেরামত করার জন্য, আর আলমারি কেনা হয়েছে তিনটি, তবে ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা কম দেওয়া হয়নি প্রায় ৩৪ জনকে কম বেশি করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সঠিক ভাবেই টাকা বন্টন করা হয়েছে। আলমারি ক্রয় বাবদ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কথা মিল পাওয়া যায়নি একজন বলছেন তিনটি আর একজন বলছেন চারটি। আবার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাইও হয়েছে ভুল সভাপতি বলছেন ৩৪ জন আর প্রধান শিক্ষক বলছেন ৪১ জন। আসলেই সঠিক হবে কোনটি সেটা বোঝার উপায় নেই। এব্যাপারে তালা সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ ফিরোজ আহমেদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি তারা নতুন কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে বেশ কিছু টাকা পরে দিয়েছেন সেজন্য হয়তো কমবেশি হতে পারে, এছাড়া আপনার অভিযোগ যদি সঠিক হয় তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য বেশ কিছু অভিভাবক বলেন প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি আব্দুর রহমান একটু এদিক সেদিক করেন, তা না হলে সে নিজের আপন ভাইপোকে নিয়োগ দিয়েই স্বজনপ্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যেটা সাধারণ জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। বেশ কয়েকজন অভিভাবক ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে প্রণোদনা সহায়তা প্রদানের অর্থের ব্যাপারে উপর মোহলের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।