সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪, ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১
Live TV
সর্বশেষ

মোঃ নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান, জয়পুরহাট

রমজানে মাসে রফিকের সেবা

মোঃ নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান, জয়পুরহাটঃ
২২ মার্চ, ২০২৪, ১:৫৮ অপরাহ্ণ | 252
রমজানে মাসে রফিকের সেবা
২২ মার্চ, ২০২৪, ১:৫৮ অপরাহ্ণ | 252

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর কলেজ বাজারে কাঁচা মালামাল পাইকারি পট্টির রফিক হোটেলে ১১ মাস ব্যবসা রমজানে মাসে বিনে পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়াচ্ছেন রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম রফিক। আট বছর ধরে রমজান মাসে এই সেবা দিয়ে আসছেন। এবার রমজানেও রফিকের হোটেলে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন শতাধিক ব্যক্তির ইফতার ও সেহরি খাচ্ছেন। দুজন স্বেচ্ছাসেবী কয়েক বছর ধরে এই হোটেলে বিনা পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়ানোর কাজে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে আসছেন।

রমজান মাসে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোজাদার ব্যক্তি ইফতার ও সেহরি খেতে আসেন। এরমধ্যে বেশি ভাগই বাহিরের লোকজন। কেউ হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন কেউ আবার কেউ বিভিন্ন কাজে এসে আটকা পড়েছেন আবার কেউ আসেন বাসায় রান্নার লোক না থাকতে।

গত আট বছর থেকে এখন পর্যন্ত পুরো রমজান মাস বিনে পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়াচ্ছেন হোটেল মালিক রফিক। কিছুক্ষণের মধ্যে হোটেলের ভেতরে ও বাহিরের সবগুলো চেয়ার রোজাদারে ভরে যায়। অনেকেই জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও ইফতার করছিলেন। ইফতারিতে গরুর গোস্তের বিরিয়ানীর সঙ্গে সালাদ থাকে।

সেহরিতেও সাদা ভাত, গরুর গোস্ত, মাছ, ডিম, ছোট মাছের ভাজি, ভর্তার আইটিম থাকে। তবে প্রতিদিন সেহরিতে গরুর গোস্ত থাকে না। সপ্তাহে তিন দিন সেহরিতে গরুর গোস্ত খাওয়ানো হয়। চার দিন ডিম-মাছ-ভাজি ও ভর্তা খায়ানো হয়। অনেকেই ইফতারি ও সেহরি খেয়ে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে হোটেল মালিক রফিক রোজাদারদের কাছ থেকে ইফতার ও সেহরি খাওয়ার টাকা নেন না। রমজান মাসে রোজাদারদের রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলামের এমন মহতি উদ্যোগে রোজাদাররা খুশি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ১৭ বছর আগে রফিকুল ইসলাম কলেজ বাজারের কাঁচা মালামাল পাইকারিপট্টিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছোট্ট পরিসরে খাবার হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। তখন তাঁর খাবার হোটেলে গরুর গোস্ত আর আটার রুটি বেশি চলত। গরুর ভূনা গোস্তের আলাদা স্বাদ হওয়ায় রফিকের হোটেলের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রফিকের হোটেলে দুর-দূরান্ত থেকে লোকজন গরুর ভূনা গোস্ত ও রুটি আর ভাত খেতে আসতে শুরু করেন। রফিক তাঁর হোটেলের জায়গাও বাড়ান। এখন প্রতিদিন প্রায় এক মণ গরুর ভূনা গোস্ত, আধা মণ আটার রুটি ও দুই মণ চালের ভাত বিক্রি করেন। অন্য দিনের চেয়ে শনি ও বুধবার হাট বারের দিনে দ্বিগুন বিক্রি হয়। গরীব ও অসহায় মানুষ এলে তাঁদের বিনে পয়সায় গোস্ত ভাত খাওয়ান। প্রতিদিনই রফিক হোটেলে খাবারের জন্য লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে। ২০১৬ সাল থেকে রফিক হোটেলে রমজান মাসে বিনে পয়সায় ইফতারি ও সেহরি খাওয়ানো শুরু করেন। সেই সময় এখন পর্যন্ত পুরো রমজান মাস বিনে পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়াচ্ছেন। রমজান মাসে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোজাদার ব্যক্তি ইফতার ও সেহরি খেতে আসেন। এরমধ্যে বেশি ভাগই বাহিরের লোকজন। কেউ হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন কেউ আবার কেউ বিভিন্ন কাজে এসে আটকা পড়েছেন। কেউ বাসায় একা থাকেন রান্নার লোকজন নেই। কিছু লোকজন রমজানের সারা মাসই রফিকের হোটেলে সেহরি খেয়ে রোজা রাখেন।

আক্কেলপুর পৌরসভার চার নম্বর ওর্য়াডের কাউন্সিলর আমিনুর ইসলাম পল্টু বলেন, কয়েক বছর রমজান মাসজুড়ে রফিক হোটেলে রোজাদারদের ইফতার ও সেহরি খাওয়ানো হচ্ছে। রফিক হোটেলের মালিকের এমন মহতি উদ্যোগে আমরা এলাকাবাসীরা গর্বিত।

রমজান মাসে এমন সেবা সেবা দিতে নিজে খুব ভালো লাগে বললেন হটেল মালিক রফিকুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৭ বছর ধরে হোটেলের ব্যবসা করছি। আল্লাহতালা আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। ২০১৬ সাল থেকে রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতারি ও সেহরি খাওয়াচ্ছি। ১১ মাস ব্যবসা করে রমজানের জন্য টাকা জমিয়ে রাখি। সেই টাকায় পুরো রমজান মাসে ইফতার ও সেহরি খাওয়ায়। প্রতিদিন ৮ কেজি গরুর গোস্ত আর ১৬ কেজি চালের বিরিয়ানী রান্না করা হয়। ইফতারিতে বিরিয়ানী ও সালাদ পরিবেশন করা হয়। সেহরিতে সপ্তাহে তিন দিন গরুর গোস্ত থাকে। এছাড়া মাছ-ডিম, ভাজি-ভর্তা থাকে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোজাদার ব্যক্তি ইফতার ও সেহরি খান। রমজান মাসে এমন সেবা সেবা দিতে নিজে খুব ভালো লাগে। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন রমজান মাসে বিনে পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়াব।