বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
Live TV
সর্বশেষ

নিজস্ব প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন

নিরব এলাকার শব্দের মাত্রা, মানমাত্রার আড়াই গুণ

নিজস্ব প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন
৪ মার্চ, ২০২৪, ৫:৫৭ অপরাহ্ণ | 82
নিরব এলাকার শব্দের মাত্রা, মানমাত্রার আড়াই গুণ
৪ মার্চ, ২০২৪, ৫:৫৭ অপরাহ্ণ | 82

শব্দ দূষণ এমন মাত্রায় গেছে যে ঢাকা শহরে নিরব এলাকার শব্দের মাত্রাও মানমাত্রার আড়াই গুণ। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) পরিচালিত এক জরিপে ঢাকা শহরের প্রায় ৪৫ টির অধিক জায়গা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি উঠে আসে। আজ ৪ মার্চ ২০২৪ সোমবার রাজধানী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শব্দ দূষনের নানান চিত্র তুলে ধরা হয়ে । পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)’র সভাপতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: মোশতাক হোসেন, নগর গবেষক মো: জাহাঙ্গীর আলম, পরিজার সহসভাপতি ক্যামেলিয়া চেšধরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হাসান মাসুদ প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবদুস সোবহান বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) ফেব্রæয়ারি – জানূয়ারি ২০২৪ মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদ গেইট, বাংলামটর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, আজিমপুর, কলাবাগান, ধানমন্ডি, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি ২৭, কলেজ গেইট, শ্যামলী, আগারগাঁও, পলাশী, লালবাগ সেকশন, নাজিরাবাজার, সচিবালয় এলাকা,। জরিপকৃত স্থানগুলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকা। নীরব এলাকায় দিবাকালীন ও রাত্রীকালীন, আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ও রাত্রিকালীন, মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ও রাত্রিকালীন এবং বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীনও রাত্রিকলীন সময়ে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এছাড়া বাসের ভিতর শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

তিনি বলেন, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৪.৫ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৯৬.৪ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ৮২.০ থেকে ৯১.০ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৩.০ থেকে ৯১.৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ৯১.০ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৯.০ থেকে ১০৩.৮ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৯২.০ থেকে ৯৭.০ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৯১.০ থেকে ৯৯.০ ডেসিবল। বাসের ভিতর ৮০.৪ থেকে ৮৩.৯ ডেসিবল। বাংলামটরে শব্দের মাত্রা ১০৩.৮ ডেসিবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৮৬.০০ থেকে ৯৪.০০ ডেসিবল। সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৬.০০ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল।

তিনি আরও বলেন, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশী এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে আড়াই গুণের বেশী । আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশী। আবাসিক এলাকায় রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশী। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশী। মিশ্র এলাকায় রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশী। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন ও রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশী। নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি সচিবালয় এলাকায় যা ১০১.৭ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ধানমন্ডি ল্যাবএইড যা ১০১.৫ ডেসিবল । মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বাংলামটর যা ১০৩.৮ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি লালবাগ সেকশন যা ১০১.৫ ডেসিবল।

সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: মোশতাক হোসেন বলেন, শব্দ দুষনের ফলে মানুষ কেবল শ্রবণশক্তি হারায় না, নানা ধরনের জটিল রোগেও মানুষ আক্রান্ত হয়। আমাদের সকলের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অতি দ্রুত সরকারকে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শব্দদূষণ হচ্ছে মানুষের শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি শব্দ সৃষ্টি হওয়া। শব্দদূষণ মানুষের স্নায়ুগুলো ধবংস করে দেয়। ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন মানুষ আর স্বাভাবিক শব্দ কানে শুনতে পায় না। বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন নগর-মহানগরে এমনকি কোনো কোনো গ্রামীণ জনপদেও শব্দদূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। শব্দদূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারী ও পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে।