নগর জীবনে শান্তির স্বর্গ
মিজানুর রহমান মিজান: আধুনিক সময়ে শহরের প্রকৃতির ছোঁয়া যেনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। শহরের জীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া যেনো ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। উঁচু ভবন, কংক্রিটের ঘনবসতি এবং অব্যাহত জনসমাগমের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। এই আধুনিক জীবনযাত্রায়, যেখানে প্রযুক্তির দাপট সবকিছুকে গ্রাস করছে, সেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সবুজের প্রতি আকর্ষণ আমাদের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে, এই পরিস্থিতির মাঝেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—ছাদ বাগানের ধারণা। ছাদ বাগান শুধু এক টুকরো সবুজ স্থান নয়, এটি শহরের পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে একটি কার্যকরী উপায়। এটি শহরের আবহাওয়া উন্নত করতে, বায়ুমানের গুণগত মান বাড়াতে এবং শহুরে জীবনে শান্তির স্পর্শ যোগাতে সক্ষম এবং ছাদ বাগান একটি সুন্দর এবং আধুনিক ধারণা, যা শহরের বাসিন্দাদের জন্য প্রকৃতির সান্নিধ্য এনে দেয়। শহরের উঁচু দালানের ছাদে গড়ে ওঠা এই বাগান, শুধু পরিবেশকে সজীব করে তোলে না, বরং তা মানসিক শান্তিও প্রদান করে। একটি ছাদ বাগান কিভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবুজের ছোঁয়া নিয়ে আসে এবং উন্মুক্ত স্থানের অভাব পূরণ করে, তা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন,বলছিলাম ফেনী জেলার, ফুলগাজী থানার জি এম হাট, লক্ষীপুর গ্রামের সৈয়দ আজহার উদ্দিন নিশাদের কথা তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বাসার ছাদে করেছেন বাগান। মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা হলে তিনি জানান,ছাদ বাগান করার শুরু টা মূলত শখের বশেই। ছোটবেলায় বাবার সাথে আমার অদক্ষ হাত মিলিয়ে সবজি গাছ লাগাতাম বাড়ির পাশে। স্বীকার করতেই হয়, চাষ-বাস করা আমার খুবই পছন্দসই একটা কাজ। এই কাজটা আমি বেশ আনন্দসহিত, প্রফুল্ল মন নিয়ে করতে পারি । তবে ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে কোনো এক বিশেষ কারণে ছাদ বাগানের প্রতি তুমুল আকর্ষণ জন্মে। সেই থেকে ছাদ বাগান করার সূচনা। কিন্তু ধীরে ধীরে গাছের নিয়মিত যত্ন নেওয়া, গাছের সাথে সময় কাটানো, নতুন নতুন গাছ সংগ্রহ করে নিজের আয়ত্তে রাখা এটা একপ্রকার কঠিন অভ্যাসে পরিণত হয় এবং এটি ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে, থামাথামির নাম নেই। বলতেই হয়, এই ছাদ বাগানেই আমার মানসিক শান্তি মিলে।
ছাদ বাগানের উপকারিতা:
ছাদ বাগান একটি আধুনিক নগর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার উপায় হিসেবে কাজ করে। এই বাগানগুলো শুধু যে শোভা বাড়ায় তাই নয়, বরং এগুলোর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন, বায়ুর গুণগত মান বৃদ্ধি, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। এছাড়াও
পরিবেশ সুরক্ষা:
ছাদ বাগান বায়ু এবং শব্দ দূষণ কমাতে সহায়তা করে। গাছপালা CO2 শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে।
শহরের তাপমাত্রা হ্রাস:
গ্রীষ্মের সময় ছাদ বাগান তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা শহরের উষ্ণতা কমায়।
শাকসবজি এবং ফল উৎপাদন:
নিজের ছাদে গাছ লাগিয়ে তাজা শাকসবজি এবং ফল উৎপন্ন করা যায়, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্যের উৎস।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি:
সবুজ পরিবেশ মানসিক চাপ কমাতে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা:
ছাদে বাগান তৈরি করলে বৃষ্টির পানি শোষণ করে, যা জলাবদ্ধতা কমাতে সহায়ক করে।
অতিথিদের জন্য স্থান:
একটি সুন্দর ছাদ বাগান পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য একটি আরামদায়ক স্থান সরবরাহ করে।
জীব বৈচিত্র্য বৃদ্ধি:
ছাদ বাগান প্রজাপতি, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করে।
ছাদ বাগানের পরিকল্পনা ও ডিজাইন:
ছাদ বাগানের পরিকল্পনা ও ডিজাইন একটি সফল বাগান তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন :
স্থান নির্ধারণ:
ছাদের আকার ও স্থান বুঝুন। এটি সূর্যের আলো, বৃষ্টির পানি ও বাতাসের প্রবাহ কেমন হবে, তা নির্ধারণ করে।
জল সরবরাহ:
নিশ্চিত করুন যে আপনি গাছগুলোকে সঠিকভাবে জল দিতে পারেন। জল নিস্কাশনের ব্যবস্থা ভালোভাবে করুন যাতে ছাদে জল না জমে।
মাটি ও পাত্র:
ভালো মাটির ব্যবহার করুন যা হালকা ও পুষ্টিতে ভরা। পাত্র বা টব ব্যবহার করলে, সেগুলো যেন ছাদের ওজন ধারণ করতে সক্ষম হয়।
ডিজাইন:
ছাদ বাগানকে আকর্ষণীয় করতে, গাছগুলোকে বিভিন্ন উচ্চতায় ও বিন্যাসে লাগান। কিছু গাছের জন্য স্থায়ী পাত্র ব্যবহার করুন এবং কিছু ঝুলন্ত পাত্রে লাগান।
উপযুক্ত গাছ নির্বাচন:
স্থানীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুযায়ী গাছ নির্বাচন করুন। কিছু সহজ পরিচর্যা করার গাছ যেমন :
সবজি:
টমেটো, মরিচ, পালং শাক, বেগুন, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পুদিনা, ধনে, ইত্যাদি।
ফুল:
গ্লাডিওলাস, কাঠগোলাপ, গোলাপ, জবা, ইত্যাদি।
ফল:
আম, পেয়ারা, লিচু, ডালিম, ড্রাগন, কমলা, সবেদা, ইত্যাদি।
ঔষধি:
তুলসী, নিম গাছ, পাথর কুচি, ইত্যাদি।
ছাদ বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ:
ছাদ বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ একটি সুস্থ এবং ফলপ্রসূ বাগানের জন্য অপরিহার্য। নিয়মিত জল দেওয়া, মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী পরিচর্যা করা গুরুত্বপূর্ণ।
পোকামাকড় এবং রোগের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, প্রয়োজনে প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। গাছগুলোর আগাছা কাটা-ছেঁটাই করাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস ও আলো পাওয়া যায়। এছাড়াও ঋতু অনুযায়ী সঠিক গাছের নির্বাচন এবং চাষের পদ্ধতি পরিবর্তন করা বাগানের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এইভাবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ একটি সফল ছাদ বাগানের ভিত্তি গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
সম্পর্কিত খবর
সর্বশেষ
- কুষ্টিয়ায় এই প্রথম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি গঠন
- সাঘাটা উন্নয়ন সংস্থা কতৃক আল কোরআন শরিফ বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ
- মানবসেবার নামে অপকর্ম ও অর্থ লোপাট (পর্ব-১)
- বাংলাদেশী বৃহত্তম বীমা শিল্প ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে কর্তৃক আয়োজিত, প্রিমিয়ামের মেয়াদ পূর্তিতে চেক প্রদান অনুষ্ঠিত
- নগর জীবনে শান্তির স্বর্গ
- সাংবাদিক মাসুদুর রহমানের ছোট মেয়ের শুভ জন্ম দিন আজ
সর্বাধিক পঠিত
- নতুন বছরে আসছে ভিন্ন ধরনের প্রেমের গল্প আন্ত:নগর
- তাড়াশে মারুফ হাসান নামের অপহৃত এক মাদরাসা ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
- নিয়তির নিমজ্জিত বিধাতার বিধান
- আজ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু
- 💕💕মাতা-পিতার মৃত্যুর পর সন্তানের করণীয়❤❤
- জয়পুরহাটে রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্যের মূল নির্ধারণ