শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১
Live TV
সর্বশেষ

পাবনায় খেজুর গাছের সংকটে গাছিরা, উৎপাদন করতে পারছেনা সুস্বাদু গুড়

দৈনিক দ্বীনের আলোঃ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | 50
পাবনায় খেজুর গাছের সংকটে গাছিরা, উৎপাদন করতে পারছেনা সুস্বাদু গুড়
১৬ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | 50

 

এস এম আলমগীর চাঁদ ,বিশেষ প্রতিনিধিঃ-

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও খেজুর রস মিলছে না। কুয়াশার দখলে তখনো সকাল। ঘুম ভাঙেনি সূর্যের। শেষ হয়নি আলো-আঁধারির যুদ্ধও। মাঠের কোণায় একটি ছায়ামূর্তি দেখা যায়। দূর থেকে ভেসে আসে “র-অ-অ-অ-স খেজুরের রস”। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয় অবয়ব। কাঁধের ভারের দুই পাশে দুটি মাটির কলস ঝুলছে। প্রত্যাশিত সেই মুখ দেখেই শিশু-কিশোররা দে ছুট। কারো হাতে জগ কারো হাতে পাতিল। পাখিদের সঙ্গে মিশে যায় শিশু-কিশোরের কোলাহল। মুখর হয়ে উঠে বাড়ির উঠান। শীতের বাংলায় অতি পরিচিত এ দৃশ্য।
মৌসুম শুরুর আগেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন গাছিরা। কে কত আগে গাছ প্রস্তুত করতে পারেন, কার গাছ কত ভালোভাবে চাঁচ দেওয়া হলো এসব নিয়ে আলোচনা চলে নিজেদের মধ্যে। তবে বর্তমানে চিরায়ত সেসব দৃশ্য চোখে পড়ে না খুব সহজেই। পাবনা অঞ্চলে হারিয়ে যেতে বসেছে সুস্বাদু খেজুরের রস। নতুন প্রজন্মের এসব দৃশ্য অনেকটাই অপরিচিত। অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছে খেজুরের রসের স্বাদ থেকে। খেজুর গাছ কাটার পেশায় জড়িতরা পেশা বদল করে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। সে কারণে খুলনায় ঐহিত্যবাহী খেজুরের রস এখন সোনার হরিণ। শিশির পড়া সকালে কম্বল পেঁচিয়ে বিছানার ওপর থেকে আর শোনা যায় না খেজুরের রস বিক্রির ডাক-হাক।
সেই সঙ্গে প্রায় হারিয়ে গেছে রাত জেগে খেজুর রসের সেই পিঠা, পায়েস বানানোর সময় বৌ-ঝিদের মিলন মেলা। পাবনায খানিকটা ভাটা পড়েছে উৎসবের আনন্দে। কুশায়ার আস্তারণ কেটে সকালের সূর্য চোখ মিলছে তবে মেলে না আর ঐহিত্যবাহী খেজুরের রস। পৌষ আর মাঘের শীতে শহরের বাইরে গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও খেজুর রস মিলছে না। গ্রামের ঘরে ঘরে রসের তৈরি হরেক রকম পিঠা, রসের তৈরি গুড় তৈরির মহোৎসব চলত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেদিনের মহোৎসব ক্রমান্বয়ে স্মৃতির পাতায় ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানে খেজুরের রস বিলুপ্তির পথে। রস না পাওয়ায় গাছির অভাব আর ইট ভাটার আগ্রাসনকে দায়ি করেছেন অনেকেই। পৌষের শেষে পড়া শীতে পাবনার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলে খেঁজুরের রস আগের মতো মিলছে না। খেজুর রস যেন এখন সোনার হরিণ। হাজার টাকা দিয়েও মিলছে না এক ঠিলা খেজুরের রস। পাবনার বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো গাছে গাছে রসের ঠিলা বাঁধা অবস্থা চোখে পড়ে না। সাঁথিয়া উপজেলা এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামাঞ্চলগুলো এখন অনেকটাই নগরায়নের পথে। গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার হওয়ার কারণে রাস্তার পাশে থাকা খেজুর গাছগুলো ক্রমান্বয়ে কেটে ফেলা হলেও বিপরীতে কেউ নতুন করে গাছ লাগায় না। যার কারণে প্রতিনিয়ত খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ যারা এ সময় এলাকায় খেজুর গাছ কাটত এখন তারা এখন ভিন্ন ভিন্ন পেশায় শহরমুখী হয়ে পড়েছে। যে কারণে আজ এই ইট পাথরের শহরে ঐহিত্যবাহী খেজুরের রস বিলুপ্তির পথে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পাবনার জনৈক কর্মকর্তা জানান, খেজুর রস সংকটের পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। যার প্রথম কারণ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও আধুনিক নগরায়নের ব্যবস্থাপনার ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামের উন্নয়নকল্পে নতুন নতুন রাস্তা সংস্কার করা জন্য রাস্তার পাশে থাকা খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে খেজুর গাছের। দ্বিতীয় কারণ হলো পেশাগত পরিবর্তন বা গাছি সংকট। যারা খেজুর গাছ কাটত, তারা আজ গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হয়ে পড়েছে। যে কারণে পেশাগত পরিবর্তন এই ঐতিহ্য হারানো অন্যতম একটি কারণ। তার মতে, বৈশ্বায়িক পরিবর্তনও একটি কারণ। এ তিনে মিলেই খেজুর রসের কৃত্রিম সংকট। তবে এর বিপরীতে বজ্রপাত রোধে আর খেজুরের রস ধরে রাখতে বেশি বেশি রাস্তার দু’পাশে খেজুর ও তাল গাছ লাগানোর পরামর্শ অভিজ্ঞদের ।

error: Content is protected !!