শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১
Live TV
সর্বশেষ

মৃত ব্যক্তির নামে চাল তুলে আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

দৈনিক দ্বীনের আলোঃ
১৭ জানুয়ারি, ২০২৪, ১:২৩ অপরাহ্ণ | 46
মৃত ব্যক্তির নামে চাল তুলে আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
১৭ জানুয়ারি, ২০২৪, ১:২৩ অপরাহ্ণ | 46

 

আলমগীর হোসেন আসিফ
ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মৃত ব্যক্তির নামে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির চাল তুলে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টুর বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের এমন অভিযোগ উঠেছে। মৃত স্ত্রীর নামে বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের বিচার দাবি করে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই ইউনিয়নের পশ্চিম ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হক।

শুধু ইসমাইল হকই নন এর আগেও ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে চাল আত্মসাতের বিচার দাবি করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আরও কয়েকজন। অভিযোগ দায়ের করে বিচার না পেয়ে ক্ষোভও জানিয়েছেন কয়েকজন অভিযোগকারী।

ইসমাইল হক তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির সুবিধাভোগী হতে অনলাইনে আবেদন করেন। আবেদনের পর চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু কে কর্মসূচির সুবিধাভোগী করে দিতে অনুরোধও জানান। এরপরে কয়েকবার চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলে চেয়ারম্যান জানান তাকে সুবিধাভোগীর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। হতাশ হয়ে ফিরে আসেন ফিরোজা বেগম। কিছুদিন পর কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। পরবর্তীতে ইসমাইল হক জানতে পারেন তার মৃত স্ত্রীর নাম কর্মসূচির উপকারভোগীর তালিকায় রয়েছে। তার নামেই নিয়মিত বরাদ্দকৃত সরকারি চাল আসে। তথ্য গোপন রেখে চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু সেই চাল তুলে আত্মসাৎ করছেন। অভিযোগে মৃত স্ত্রীর নামে বরাদ্দকৃত সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগ সরজমিনে তদন্ত করে উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন ইসমাইল হক।

চাল আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিচার না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন আরেক অভিযোগকারী নুর নাহার বেগম। তিনি একই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বড়লই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, চাউল না পেয়ে ইউএনও সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দেই। কিছুদিন পর ইউএনও স্যার ঘটনার তদন্ত করতে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে তিনি আমার বরাদ্দকৃত চাল আমাকে দেওয়ার জন্য বলে যান। কিন্তু অনেকদিন হয়ে গেল আমরা আজও চাউল পাইনি। চাউল তো পাইনি তারউপর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে ফোন করে গালিগালাজ করে। বলে – ‘অভিযোগ দিয়ে আমার ঘাস কাটতে পারবি। কারো বাবার সাধ্য নাই আমার গায়ের একটা লোম খাড়া করতে পারে’। আমাদের মত গরিব মানুষের হক মেরে খাবে এটা কি দেখার কেউ নেই? আমরা গরিব মানুষ বলে কি বিচার পাবো না? ক্ষোভ জানান তিনি।

বিউটি বেগম নামের আরেক নারী বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিন দফার চাল তোলার পর মিন্টু চেয়ারম্যান আমার চাল বন্ধ করে দেয়। পরে আমি ইউএনও বরাবর অভিযোগ দেই। এরপর ইউএনও স্যার আমাকে ফোন দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চাল আনতে বলেন। স্যারের কথা মতো আমার বাবাকে সাথে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যাই। আমার ৫০ কেজির ৯ বস্তা চাল পাওনা ছিল। মিন্টু চেয়ারম্যান আমাকে ৩ বস্তা চাল দিয়ে আপসের কাগজে স্বাক্ষর করায়। বাকি ৬ বস্তা চাল চাইলে তিনি আমাকে ও বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। অভিযোগ দিয়েও ন্যায় বিচার পেলাম না। আক্ষেপ জানান তিনি।

চাল আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টুর বিরুদ্ধে গত ০২/১০/২০২৩ তারিখে একই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আছমা বেগম, ১০/১০/২০২৩ তারিখে ৪নং ওয়ার্ডের নুর জাহান বেগম, ১৫/১০/২০২৩ তারিখে ১নং ওয়ার্ডের বিউটি বেগম, ৩০/১০/২০২৩ তারিখে ৬নং ওয়ার্ডের শরিফা বেগম এবং ০২/১১/২০২৩ তারিখে ৮ নং ওয়ার্ডের নুর নাহার বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

একের পর এক চাল আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমি কারও চাল আত্মসাৎ করিনি। অন্যের প্ররোচনায় অভিযোগ করেছেন এমন কয়েকজন অভিযোগকারী আমার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। নতুন করে মৃত ব্যক্তির বরাদ্দের চাল আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে এটিও ভিত্তিহীন, মিথ্যা বানোয়াট। ওই মহিলা মারা গেছে আমি জানতাম না। কয়েকদিন আগে শুনেছি। তার নামে যে কার্ডটি রয়েছে সেটি বাতিলের জন্য প্রক্রিয়া চলছে।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি নিজে বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কয়েকজনের অভিযোগের সমাধান করে দিয়েছি। নতুন করে একই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মৃত ব্যক্তির নামে চাল তুলে আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

error: Content is protected !!